বাংলাদেশের সমুদ্রগামী জাহাজগুলোর ১০ হাজার নাবিক বছরে ৪৭ কোটি মার্কিন ডলারের বৈদেশিক মুদ্রা আয় করেন। এই আয় বাংলাদেশের প্রায় চার হাজার কোটি টাকার সমান (প্রতি ডলার ৮৫ টাকা ধরে)। অথচ সরকারের যথাযথ উদ্যোগ না থাকায় বৈদেশিক মুদ্রা উপার্জনকারী এসব নাবিকের চাকরিই এখন হুমকির মুখে।

প্রধানত চার কারণে বিপদে আছেন বাংলাদেশি নাবিকেরা। কারণগুলো হচ্ছে, করোনার টিকা পেতে দেরি হওয়া, নৌপরিবহন অধিদপ্তর থেকে সার্টিফিকেট অব প্রফিসিয়েন্সি (সিওপি) পেতে দীর্ঘসূত্রতা, বাংলাদেশ ও সিঙ্গাপুরে করোনা পরীক্ষার যথাযথ ব্যবস্থা না থাকা এবং সরকারের পক্ষ থেকে নাবিকদের জন্য ওয়েজ আর্নার্স ডেভেলপমেন্ট বন্ডে বিনিয়োগসুযোগ সংকুচিত করে রাখা।

নাবিকদের সংগঠন বাংলাদেশ মার্চেন্ট মেরিন অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিএমএমওএ) আজ শনিবার সকালে রাজধানীর ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে আয়োজিত ‘বিশ্বায়নের যুগে মেরিটাইম সেক্টরের আধুনিকায়ন: পুঞ্জীভূত সমস্যা সমাধানে প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ’ শীর্ষক এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেছে।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বিএমএমওএর সভাপতি ক্যাপ্টেন মোহাম্মদ আনাম চৌধুরী, সহসভাপতি মো. মাহবুবুর রহমান, সহসভাপতি ক্যাপ্টেন গোলাম মহিউদ্দিন কাদরী, কোষাধ্যক্ষ মো. আলী হোসেন, কার্যনির্বাহী সদস্য কাজী মো. আবু সায়ীদ, অঙ্গন দাস প্রমুখ।

লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রিধারী মেরিন ক্যাডেটসহ দেশের ১০ হাজার সমুদ্রগামী জাহাজের নাবিক কোভিডের টিকার জন্য নিবন্ধন করলেও অল্পসংখ্যক নাবিক টিকা পেয়েছেন। নিবন্ধনের পরও দেরিতে খুদে বার্তা (এসএমএস) পাওয়ায় নাবিকদের টিকা নিতে দেরি হচ্ছে। এতে অনেকেই চাকরিতে যোগ দিতে পারছেন না। জরুরি ভিত্তিতে এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া দরকার। আপাতত বিদেশগামী জাহাজের নাবিকদের টিকার জন্য ঢাকা ও চট্টগ্রামে দুটি হাসপাতাল নির্দিষ্ট করা যেতে পারে।

লিখিত বক্তব্যে আরও বলা হয়, বাংলাদেশি নাবিকদের অনেককেই সিঙ্গাপুর থেকে সাইন অব (জাহাজ থেকে নামা) করতে হয়। কিন্তু সিঙ্গাপুর মেরিটাইম কর্তৃপক্ষের প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, সিঙ্গাপুরে কোনো নাবিককে সাইন অব করতে হলে আগের বন্দর থেকে করোনা পরীক্ষা করা বাধ্যতামূলক। সিঙ্গাপুরে সাইন অব করে দেশে আসার ক্ষেত্রেও করতে হয় করোনা পরীক্ষা। পুরো বিষয়টিই জটিল হয়ে পড়েছে। আর এ কারণে বিদেশি জাহাজ কোম্পানিগুলো বাংলাদেশি নাবিকদের নিয়োগ দিতে অনাগ্রহী হয়ে পড়েছে। এ অবস্থায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে সিঙ্গাপুর কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে সমস্যার দ্রুত সমাধান করতে হবে।

নৌপরিবহন অধিদপ্তর সিওপি দিতে অহেতুক কালক্ষেপণ করছে বলেও সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করা হয়। বলা হয়, মেরিন একাডেমি অথবা স্বীকৃত অন্য কোনো ইনস্টিটিউট থেকে কোর্স শেষ করে সিওপি পাওয়ার পরও তা মূল্যায়নের জন্য আবার লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষা দিতে বাধ্য করছে অধিদপ্তর। অথচ স্ট্যান্ডার্ড ট্রেডিং সার্টিফিকেশন অ্যান্ড ওয়াচকিপিং ফর সি-ফেয়ারার (এসটিসিডব্লিউ) অনুযায়ী, নাবিকদের জন্য সিওপি পরীক্ষার আবার মূল্যায়ন অত্যাবশ্যক নয়। সিওপি মূল্যায়নে নৌ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা অনৈতিক আর্থিক সুবিধাও আদায় করেন।

সমুদ্রগামী জাহাজ থেকে বাংলাদেশে প্রত্যাবর্তনে ইচ্ছুক নাবিকদের পক্ষে সশরীর দূতাবাসে উপস্থিত হয়ে মেয়াদোত্তীর্ণ পাসপোর্ট নবায়ন এবং ইলেকট্রনিক ট্রাভেল পাস (ইটিপি) সংগ্রহ করাও অসম্ভব হয়ে পড়ে বলে জানানো হয়। বলা হয়, সমুদ্রগামী জাহাজে কর্মরত বাংলাদেশি নাবিকদের স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের সুব্যবস্থা করতে হবে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে বিদেশে বাংলাদেশি দূতাবাস/ মিশনগুলোতে পাসপোর্টের কপির মাধ্যমে যেন নাবিকদের জন্য ইটিপির ব্যবস্থা করা হয়।

সংবাদ সম্মেলনে আরও বলা হয়, ১৯৮৮ সালে চালু হওয়া ওয়েজ আর্নার্স ডেভেলপমেন্ট বন্ডে সমুদ্রগামী জাহাজের নাবিকেরা বিনিয়োগ করে এলেও ২০২০ সালে তা হঠাৎ বন্ধ করে দেওয়া হয়। একদিকে প্রবাসী আয় আনার জন্য ২ শতাংশ প্রণোদনা হচ্ছে, আরেক দিকে তাঁদের জন্য বিপরীতমুখী অবস্থান নিয়েছে সরকার। বন্ডে বিনিয়োগসুবিধা আবার বহালের দাবি জানায় সংগঠনটি।

এ ছাড়া প্রস্তাবিত বাংলাদেশ বাণিজ্যিক নৌপরিবহন আইনে নাবিকদের চাকরির নিরাপত্তার বিধান করার দাবি জানায় বিএমএমওএ।

সূত্রঃ PROTHOMALO.COM