করোনাভাইরাসের টিকা সময়মতো না পাওয়ায় বাংলাদেশি মেরিনাররা বৈদেশিক চাকরির বাজার হারাচ্ছেন। তাই দ্রুত এসএমএম পাওয়াসহ মেরিনারদের টিকাদান সহজ করা এবং সার্টিফিকেট অব প্রফিসিয়েন্সি (সিওপি) পেতে দীর্ঘসূত্রতা ও জটিলতার সমাধানের দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ মার্চেন্ট মেরিন অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিএমএমএ)।

গতকাল শনিবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির নসরুল হামিদ মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলনে আট দফা দাবি জানায় বাংলাদেশ মার্চেন্ট মেরিন অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশন।

বিদেশগামী জাহাজের নাবিকদের করোনা ভ্যাকসিন নেওয়ার জন্য ঢাকা ও চট্টগ্রামে দুটি হাসপাতাল নির্দিষ্টকরণের দাবি জানানো হয় সংবাদ সম্মেলনে। বলা হয়, কভিড-১৯ ভ্যাকসিনের জন্য নিবন্ধন করলেও খুব অল্পসংখ্যক নাবিক ভ্যাকসিন পেয়েছেন। এই পদক্ষেপ গ্রহণে যত বিলম্ব হবে, বিভিন্ন দেশের শিপিং  কোম্পানিগুলোয় বাংলাদেশি নাবিকদের চাকরির বাজার তত সংকুচিত হবে।

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, বাংলাদেশি মেরিনারদের বেশিরভাগকেই সিঙ্গাপুর থেকে সাইন অফ (জাহাজ থেকে নামা) করতে হয়। সিঙ্গাপুর মেরিটাইম কর্তৃপক্ষের সার্কুলার অনুসারে সিঙ্গাপুরে কোনো মেরিনারকে সাইন অফ করতে হলে আগের বন্দরে করোনার পিসিআর পরীক্ষা করতে হয়। কিন্তু অনেক বন্দরে তা সম্ভব হয় না। আবার সিঙ্গাপুরে সাইন অফ করে দেশে আসার জন্যও পুনরায় পিসিআর পরীক্ষা করতে হচ্ছে। ফলে সামগ্রিক প্রক্রিয়া অত্যন্ত জটিল হয়ে পড়েছে। এ কারণে বিদেশি শিপিং  কোম্পানিগুলো বাংলাদেশি মেরিনার নিয়োগে অনাগ্রহী হয়ে পড়ছে। এ অবস্থায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে সিঙ্গাপুর কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে সমস্যার দ্রুত সমাধান করতে হবে।

নাবিকদের সিওপি প্রদানে জটিলতার জন্য নৌ পরিবহন অধিদপ্তরকে দায়ী করে ক্যাপ্টেন আনাম চৌধুরী বলেন, স্ট্যান্ডার্ড ট্রেডিং সার্টিফিকেশন অ্যান্ড ওয়াচকিপিং ফর সী-ফেয়ারার (এসটিসিডব্লিউ) অনুসারে নাবিকদের জন্য পুনরায় সিওপি পরীক্ষার অধিকতর মূল্যায়ন অত্যাবশ্যক নয়। মেরিন অ্যাকাডেমি অথবা স্বীকৃত অন্য কোনো ইনস্টিটিউট থেকে শর্টকোর্স সম্পন্ন করে সিওপি পাওয়ার পর তা মূল্যায়নের জন্য পুনরায় লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষা গ্রহণের নামে নাবিকদের কালক্ষেপণের পাশাপাশি নানা রকম হয়রানিও করছে নৌ অধিদপ্তর। এছাড়া সিওপি মূল্যায়নের জন্য নাবিকদের ওপর নির্ধারিত ফি ধার্য করা হয়েছে। এই দীর্ঘ ও জটিল প্রক্রিয়ার পেছনে নৌ অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের অনৈতিক আর্থিক সুবিধা রয়েছে অভিযোগ করে ধার্য ফি মওকুফ ও শুধুমাত্র অনলাইন মূল্যায়ন অথবা মৌখিক পরীক্ষার মাধ্যমে দ্রুত সিওপি প্রদানের দাবি জানান তিনি।

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, উচ্চ করোনা ঝুঁকিপূর্ণ দেশ থেকে  কোনো ভ্রমণকারী বা যাত্রী র‌্যাপিড টেস্টের (অ্যান্টিজেন টেস্ট)  নেগেটিভ ফলাফল ব্যতীত ইউরোপিয়ান দেশগুলোয় প্রবেশ করতে পারছেন না। সেসব দেশ থেকে বাংলাদেশি মেরিনারদের সাইন অনের জন্য র‌্যাপিড টেস্টের নেগেটিভ  ফলাফল বাধ্যতামূলক। এই টেস্ট বিমানে ওঠার চার ঘণ্টা আগে করতে হয়।  সেজন্য হযরত শাহজালাল বিমানবন্দরসহ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরগুলোয় র‌্যাপিড টেস্টের ব্যবস্থা প্রয়োজন। সংবাদ সম্মেলনে ক্যাপ্টেন মোহাম্মদ আনাম চৌধুরীর সভাপতিত্বে লিখিত বক্তব্য পড়ে শোনান বোমার সহসভাপতি মেরিন ইঞ্জিনিয়ার  মো. মাহবুবুর রহমান। এ সময় অন্যদের মধ্যে আলোচনা করেন সংগঠনের সিনিয়র সহসভাপতি ক্যাপ্টেন গোলাম মহিউদ্দীন কাদরী, ট্রেজারার চিফ অফিসার মো. আলী হোসেন, কার্যনির্বাহী সদস্য মেরিন ইঞ্জিনিয়ার কাজী মো. আবু সায়ীদ, মেরিন ইঞ্জিনিয়ার অঙ্গন দাস প্রমুখ।

সূত্রঃ DESHRUPANTOR.COM