করোনা প্রতিষেধক ভ্যাকসিন গ্রহণে বিলম্ব ও সার্টিফিকেট অফ প্রফিসিয়েন্সি (সিওপি) পেতে দীর্ঘসূত্রিতা ও জটিলতার কারণে মেরিন ইঞ্জিনিয়াররা বিদেশি শিপিং কোম্পানিগুলোতে চাকরি পাচ্ছেন না। স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রিধারী মেরিন ক্যাডেটসহ বাংলাদেশের আট হাজার সী-ফেয়ারার (সমুদ্রগামী জাহাজের নাবিক) কোভিড-১৯ ভ্যাকসিনের জন্য নিবন্ধন করলেও খুব অল্পসংখ্যক নাবিক ভ্যাকসিন পেয়েছেন। এ ছাড়া সিওপি প্রদানের অহেতুক দীর্ঘ কালক্ষেপন করছে নৌ পরিবহন অধিদপ্তর। এ দুটি জটিল সমস্যার কারণে বহির্বিশ্বে বাংলাদেশি মেরিনারদের চাকরির বাজার হারানোর উপক্রম হয়েছে। অথচ মেরিনাররা প্রতি বছর ৪৭০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারেরও বেশি বৈদেশিক মুদ্রা দেশে আনছেন; যা  জাতীয় অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।

শনিবার (৪ সেপ্টেম্বর) সকালে রাজধানীর ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির নসরুল হামিদ মিলনায়তনে বাংলাদেশ মার্চেন্ট মেরিন অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশন (বোমা) আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা এসব কথা বলেন।

বিশ্বায়নের যুগে মেরিটাইম সেক্টরের আধুনিকায়ন: পুঞ্জিভূত সমস্যা সমাধানে প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের সভাপতি ক্যাপ্টেন মোহাম্মদ আনাম চৌধুরী। লিখিত বক্তব্য পড়ে শোনান সংগঠনের  সহসভাপতি মেরিন ইঞ্জিনিয়ার মো. মাহবুবুর রহমান। সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন সিনিয়র সহসভাপতি ক্যাপ্টেন গোলাম মহিউদীন কাদরী, সংগঠনের ট্রেজারার চিফ অফিসার মো. আলী হোসেন, কার্যনির্বাহী সদস্য মেরিন ইঞ্জিনিয়ার কাজী মো. আবু সায়ীদ, মেরিন ইঞ্জিনিয়ার অঙ্গন দাস প্রমুখ।

বিদেশগামী জাহাজের নাবিকদের করেনা ভ্যাকসিন নেওয়ার জন্য ঢাকা ও চট্টগ্রামে দুটি হাসপাতাল নির্দিষ্টকরণের দাবি জানিয়ে সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, এই পদক্ষেপ গ্রহণে যতো বিলম্ব হবে বিভিন্ন দেশের শিপিং কোম্পানিগুলোতে বাংলাদেশি নাবিকদের চাকরির বাজার ততো সংকুচিত হবে। এছাড়া বাংলাদেশি মেরিনারদের অনেকাংশকেই সিঙ্গাপুর থেকে সাইন অফ (জাহাজ থেকে নামা) করতে হয় উল্লেখ করে সংগঠনের নেতারা বলেন, সিঙ্গাপুর মেরিটাইম কর্তৃপক্ষের সার্কুলার অনুসারে সিঙ্গাপুরে কোনো মেরিনারকে সাইন অফ করতে হলে পূর্ববর্তী পোর্টে করোনার পিসিআর টেস্ট করতে হয়। কিন্তু অনেক পোর্টে তা সম্ভব হয় না। আবার সিঙ্গাপুরে সাইন অফ করে দেশে আসার জন্যও পুনরায় পিসিআর টেস্ট করতে হচ্ছে। ফলে সামগ্রিক প্রক্রিয়া অত্যন্ত জটিল হয়ে পড়েছে। এ কারণে বিদেশি শিপিং কোম্পানিগুলো বাংলাদেশি মেরিনার নিয়োগের প্রতি অনাগ্রহী হয়ে পড়ছে। এ অবস্থায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে সিঙ্গাপুর কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে সমস্যার দ্রুত সমাধান করা অপরিহার্য।

নাবিকদের সিওপি প্রদানে জটিলতার জন্য নৌ পরিবহন অধিদপ্তরকে দায়ী করে ক্যাপ্টেন আনাম চৌধুরী বলেন, এসটিসিডব্লিউ (স্ট্যান্ডার্ড ট্রেডিং সার্টিফিকেশন এ্যান্ড ওয়াচকিপিং ফর সী-ফেয়ারার) অনুসারে নাবিকদের জন্য পুনরায় সিওপি পরীক্ষার অধিকতর মূল্যায়ন আবশ্যক নয়। মেরিন একাডেমি অথবা স্বীকৃত অন্য কোনো ইনস্টিটিউট থেকে শর্টকোর্স সম্পন্ন করে সিওপি পাওয়ার পর তা মূল্যায়নের জন্য পুনরায় লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষা গ্রহণের নামে নাবিকদের কালক্ষেপনের পাশাপাশি নানা রকম হয়রানিও করছে নৌ অধিদপ্তর। এছাড়া সিওপি মূল্যায়নের জন্য নাবিকদের ওপর নির্ধারিত ফি ধার্য করা হয়েছে। এই দীর্ঘ ও জটিল প্রক্রিয়ার পেছনে নৌ অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের অনৈতিক আর্থিক সুবিধা রয়েছে অভিযোগ করে ধার্য্য ফি মওকুফ ও শুধুমাত্র অনলাইন মূল্যায়ন অথবা মৌখিক পরীক্ষার মাধ্যমে দ্রুত সিওপি প্রদানের দাবি জানান ক্যাপ্টেন আনাম চৌধুরী।

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, উচ্চ করোনা ঝুঁকিপূর্ণ দেশ থেকে কোনো ভ্রমণকারী/যাত্রী র‌্যাপিড টেস্টের (অ্যান্টিজেন টেস্ট) নেগেটিভ ফলাফল ব্যতীত ইউরোপিয়ান দেশসমূহে প্রবেশ করতে পারছেন না। সে সকল দেশ থেকে বাংলাদেশি মেরিনারদের সাইন অনের জন্য র‌্যাপিড টেস্টের নেগেটিভ  ফলাফল বাধ্যতামূলক। এই টেস্ট বিমানে ওঠার চার ঘণ্টা আগে করতে হয়। সেজন্য হযরত শাহজালাল বিমানবন্দরসহ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরসমূহে র‌্যাপিড টেস্টের ব্যবস্থা প্রয়োজন।

সংগঠনের নেতারা আরো বলেন, বিদেশি পতাকাবাহী জাহাজে কর্মসংস্থান ধরে রাখা এবং সুযোগ বৃদ্ধির জন্যে বাংলাদেশি নাবিকদের নতুন পাসপোর্ট প্রদান ও নবায়ন কার্যক্রম আবেদনের ৭২ ঘণ্টার মধ্যে সম্পন্ন করা প্রয়োজন। এছাড়া সমুদ্রগামী জাহাজ থেকে বাংলাদেশে প্রত্যাবর্তনে ইচ্ছুক নাবিকদের পক্ষে সশরীরে দূতাবাসে উপস্থিত হয়ে মেয়াদোত্তীর্ণ পাসপোর্ট নবায়ন এবং ইলেকট্রনিক ট্রাভেলপাস সংগ্রহ করা অসম্ভব হয়ে যায়। এজন্য সমুদ্রগামী জাহাজে কর্মরত বাংলাদেশি নাবিকদের স্বদেশে প্রত্যাবর্তনের সুবিধার্থে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে বিদেশে বাংলাদেশি দূতাবাস/মিশনসমূহে পাসপোর্টের কপির মাধ্যমে নাবিকদের জন্য ইলেকট্রনিক ট্রাভেল পাসের (ইটিপি) ব্যবস্থা করতে হবে।

সূত্রঃ SHOMOYERALO.COM